Friday 14 December 2012


বউঠান ও কালপুরুষের কুকুর
                    -তন্ময় ধর

শীত নেই। অন্ধকার একটু বেশিই। কেউ নেই আশেপাশে। অথচ একটা পায়ের শব্দ। সেটাকে ভাল করে শুনতে গেলেই বৃষরাশি আর মৃগশিরা থেকে উল্কাবৃষ্টি শুরু হচ্ছে। একটা ছায়া যেন হালকা কোহলের বুদবুদ উড়িয়ে বলতে চাইছে-তোমার চোখের রঙ যদি নীল হয় তাহলে... আমায় ফলো করো...চেনা আর অচেনা স্বরের মাঝখানে পৃথিবীর গহন শীতকাল পেন্ডুলামের মতো দুলছে।
সমস্ত উল্কাবৃষ্টিকে আমি কাকতালীয় ভেবে নিলাম। অন্ধকার আঙুলের চাপ থেকে ওষুধের গন্ধ উড়ে গেল। এ পৃথিবীর নয় যেন অমন একটা ডিফিউজড আলো এসে ওর মুখের মানচিত্রটা দেখিয়ে দিল।পানপাতার মতো মুখে দুধে-আলতা রঙ, যাবতীয় কাজল আর আই-শ্যাডো উপচে একটাই টক গন্ধ। বউঠান। হড়হড় করে বমির শব্দ। আর কালপুরুষের হিংস্র কুকুর চেটে খাচ্ছে তাজা অ্যালকোহলের আনুষঙ্গগুলো। বাতাসে মানে ভূত্বকের খুব কাছের বাতাসের স্তরে শীতকাল পা ফেলতে পারছে না। অপাচ্য শস্যকণা আর কোহলের টাটকা গন্ধ থেকে থেকে বউঠান তৈরি করে নিচ্ছেন তাঁর কঙ্কালসার শরীর। কুকুরের শ্বদন্তের ফাঁক দিয়ে ফসকে উঠে যাচ্ছে গান্ধার ভাস্কর্যের দৃঢ় কঙ্কাল। দাঁড়াও, বউঠান, তোমার খিদের কথা বলে যাও...। সাড়া মিলল না। টক দেহরস আর অর্ধমৃত রক্তের গন্ধ লক্ষ্মীর পায়ের মতো ছোটো ছোটো পায়ের ছাপ ফেলে হাঁটতে থাকল আমার সামনে।টর্চের নিষ্প্রভ আলোয় শিকারী কুকুরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
          ধারালো দাঁতে হাড় চেবানোর শব্দ পেলাম আমি। হঠাৎ বয়ে আসা একটা কুয়াশার শিরশিরানি। বউঠান... আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না...। গন্ধটা খুব তীব্র হয়ে উঠল।  আর একটা অদ্ভূত আলগা যন্ত্রণা-জড়ানো ঘুম। কোন কারণ ছাড়াই তীব্র চিৎকার করতে শুরু করল কুকুরটা। আমি অন্ধকার থেকে শুধু পিছোতে শুরু করলাম। পিছোতে থাকলাম অনেক অনেক দূরে, যেখানে বিশুদ্ধ পেনসিল স্কেচে ঢেকে রাখা আছে আমার ঘুমের ওষুধের ওভারডোজ, জল এবং মৃত্যুচেতনা... 

Tuesday 20 November 2012

মিশ্র পাহাড়ি -অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়




মিশ্র পাহাড়ি
        -অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়

    কোথাও ট্যুরিস্ট, তার জাদুকাঁধে ঈষৎ ব্যাগ টুপিতে ছিটকে যাচ্ছে রোদ তরল সোনা সব গাছ মা সব ঘাস পাথর, পাহাড়, ঢিপিগুলো বাবার মতোন কেউ আসলে কোত্থাও পৌঁছবে না বেজে যাচ্ছে মিশ্র পাহাড়ি রাগ এঁকেবেঁকে, ঘুরেঘুরে, উঁচুতে নিচুতে, ঢাল থেকে ঢালে, উঠতে থাকা নামতে থাকা গলি, রাস্তা দুলতে দুলতে চলা শুনলে মনে হয় একটা বাচ্চা হাঁটা শিখছে পাশ থেকে তবলা বাজছে আস্তে মৃদু কিন্তু দৃঢ় বাবার সঙ্গত আর হালকা গিটার লাইম জিন কি ভদকার মতো আমার কেন যেন ভাবতে ইচ্ছে করে ওটা অঞ্জন দত্ত হঠাৎ কি চঞ্চল হয়ে উঠল বাচ্চাটা? হঠাৎ হামাগুড়ি দিয়ে এদিকে ওদিকে খিলখিল দৌড় বাবাও একটু গতি বাড়ালো তাকে ধরতে হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বাজাচ্ছেন মিশ্র পাহাড়ি গাঢ় এক ঘরের মতো যেন আলমারি থেকে বেরোল গোপন ফতুয়া আমার পায়ের তলা সুড়সুড় করতে থাকে বসে থাকতে যে ইচ্ছে করেনা কোন রাগ শুনছি! কোন বাজনা! একসময় বাবা ছেলে দুজনেই খিলখিল হাসি আর দৌড় নাকি পাহাড়ের আঁকাবাকা রাস্তাটাকে আমি বানিয়ে ফেলেছি বৃন্দাবন! তোমার সাথে লুকোচুরি খেলছি পাইনের বনে…  কারোর বাড়ির উঠোন বাগান টপকে তোমাকে ধরার চেষ্টা আমার…  তুমি এই দেখা দিচ্ছো, তো আবার লুকিয়ে পড়ছো কার মেলে রাখা শাড়ির আড়ালে.. একবার মনে হল দেখতে পেলাম তোমার ওড়নাটা আস্তে পা টিপে জাপটে ধরতে গিয়েই ফুস! যাব্বাবা! তো কুয়াশা! তুমি কোথায়! আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিলাম খাদে দেখেছো? কিন্তু তোমাকে তো পাচ্ছিই না! কোমরে হাত রেখে এদিকে ওদিকে দেখছি আর ঠিক এমন সময় বৃষ্টিটা নামল আমি ক্যামন যেন ভ্যাবলা হয়ে গেলাম, জানো? ভুলেই গেলাম আমার একটা ছাদের নিচে যাওয়া দরকার আসলে কি করব বলো! বৃষ্টির আওয়াজটা যে মোটেই বৃষ্টির মতো ছিলো না তোমার কাঁচের চুড়ি বাজছিল রিনরিন হঠাৎই নামলো বৃষ্টি, আর হঠাৎ থেমে গিয়ে টুকরো মেঘটা তুলোর মতো ভেসে ভ্যানিশ হয়ে গেল কাঠের বাড়িটার পেছনে আমি স্পষ্ট দেখলাম, মেঘটা চুপচাপ দাঁড়িয়েই ছিল তোমার কাঁচের চুড়ির আওয়াজ ছাড়া কোত্থাও কোনো গন্ডগোল নেই কিন্তু, কোত্থেকে কে এসে ফুঁ দিল যেন মেঘটাকে..  আর মেঘও ফুড়ুৎ আমি দাঁড়িয়েই থাকলাম ভিজে জামায় কাপড়ে খুব রাগ হচ্ছিল তোমার ওপরে হরিপ্রসাদ আর অঞ্জন দত্ত ওপরেও হচ্ছিল এভাবে আমাদেরকে এখানে এনে ছেড়ে যাবার কোনো মানে হয়! কি করি এখন? আমি জানি তুমি কাছেই কোথাও আড়ালে আছো লুকিয়ে দেখছো আমাকে আমার জুতোর ভেতরে জল বদগন্ধ মোজা মেজাজটাকে কিছুতেই ওরকম হতে দেব না ভাবছি দেখি, আরেকটু দাঁড়াই ভাবতে ভাবতে পকেটে হাত দিয়েছি, একি!? কি এটা, নরম তুলোর মতো! ভেজা তুমি? এখানে? আমার পকেটে? সোনা..  আর আমি তোমাকে এর উঠোনে ওর বাগানে খুঁজে বেড়াচ্ছি! পকেট থেকে আস্তে বের করে দেখি তোমার চোখে জল কাঁদছিলে? তাহলে কি বৃষ্টি হয়নি?   

Saturday 17 November 2012

             উত্তর শূন্যের আর্কাইভের গদ্যের পাতা 'উষ্ণিকীয়' এসে গেল। অবশ্যই মুক্ত গদ্যের পাতা। কোন ফতোয়া নেই, নিয়ম-কানুন নেই। মুক্ত থেকে বদ্ধ- সব উন্মত্ততা যেমন খুশি সাজিয়ে শুধু টুপ করে ফেলে দেওয়া এ পাতায়। সুতরাং দেরি করবেন না। আপনার মাথার ভেতরে ও বাইরে যা কিছু ওড়াউড়ি করছে তাকে খপ করে ধরে সাজিয়ে ফেলুন কিম্বা এলোমেলো করে ফেলুন । তারপর আমাদের হাতে তুলে দিন, এই ঠিকানায়- ushnik.editor@gmail.com
             আমরা ওকে উষ্ণিকের সুতোয় বেঁধে দূর আকাশে উড়িয়ে দেব, ডাকঘুড়ির মতো। তারপর সেই ডাকঘুড়ির শব্দে পৃথিবীর সব পাগলের ঘুম ভেঙে গেলে আমরা সুতোর টানে হাওয়াই-কসরত দেখাব।প্রমিস।
             এখন সুবাতাস বইছে। শিগগির, মনের রং-বেরঙের ঘুড়িগুলোকে উড়িয়ে দিন...