মানচিত্র
পেরিয়ে
-অনিন্দিতা
গুপ্ত রায়
পৃথিবীর
নাকি তিন ভাগই জল। তো পাগল সেটা জানে। মানে ও তো আর জন্ম ইস্তক পাগল নয়, আর ও যে
পাগল সেটাতো আর ও জানেনা... অন্যেরা জানে। তা ওরা তো আর এটা জানে না যে পাগল আসলে
অল্প অল্প সবই জানে। এই যেমন এই যে শরীরটা এত পরিপাটি করে ফিটফাট করে ফুলবাবুটি
হয়ে থাকো তোমরা, তোমাদের সবার মধ্যেই এক দাঁতখিঁচোনো হাড্ডিমানুষ বসত করে, ও জানে।
ওর পেটের মধ্যেও মাঝে মাঝেই অমন তিন ভাগ
জল থই থই করে। দুখান বিস্কুট বা একগাল মুড়ি দিয়ে সিকি ভাগ স্থলে ও ত দিব্যি চালিয়ে
নিচ্ছে এতকাল। আজ পাগল আলোর গল্পটা বলছিল । সে নাকি অনেক জন্মের আগের কথা। চোখ
বন্ধ করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে নাকি চেনা ঠেকে তাকে। দেখলে পরে হবে না, ছুঁয়ে দেখতে হবে।
যেমন করে জোছ্না দ্যাখো, যেমন করে রোদ্দুর, যেমন
করে আগুন, তেমন করে,তেমনি করে। কত জন্ম আগের কথা বলে পাগল কে জানে। জানলার পাশে
সারাদিন পর যেমন করে সন্ধ্যাতারা , তেমনি পাগলও তার গল্প মাথায় হাজির। একেকদিন
একেক জিনিস ফিরি করে সে। কাল এনেছিল জলের গল্প, সমুদ্দুরের, আর একটা নৌকো আঁকছিলাম
সারাদিন। আয়ত চোখের মত সজল, বাঁশপাতার মত ছিপছিপে। মেঝের ওপর বিছানার নিচে কিরকম স্রোত স্রোত ঢেউ ঢেউ আর সীগালগুলোর
উড়ে আসা। ছুঁয়ে ছুঁয়েই দেখছিলাম, শুয়ে শুয়ে ।আর সত্যি সত্যি খুবচেনা,গতজন্মের। যা
বলছিলাম, পাগল আজ হাঁক পাড়ছে -আলো নেবে গো আলোওওওওওওওওওও....একটা
গান বেজে উঠছে। এক্ষুনি একটা বিষাদমাখা রং উপচে উঠে ডানার মত কিছু একটা মেলে দেবে নিজেকে...আস্তে আস্তে পাখনার মত হয়ে যাবে আর হুইল
চেয়ারটার দুপাশে এসে জুড়ে যাবে। কোত্থাও
কোনও হাওয়া নেই অথচ আলোপথ ছায়াপথ পেরিয়ে উঠে যাবে নীলের মত অতলান্ত ভেদ করে ...চাকাওয়ালা
একটা স্পেসশিপ্ । মুখের একপাশটায় অন্ধকার, অন্য পাশটায় আলো । ঠিক যেন পৃথিবীর দুই
গোলার্ধ । পায়ের তলায় স্পষ্ট তিন ভাগ জল , এক ভাগ স্থল....আর ওই ডাঙাটার ওপর
দাঁড়িয়েই পাগলটা জন্মান্তরের গল্প বলে যাচ্ছে...কর গুনেগুনে..... এসাইলামের ঘন্টা গুলো শোনা যাচ্ছে গ্যালাক্সি ছাড়িয়ে
..আলো নেবে গো...আলোওওওওওওওওওও ..........।