মিশ্র পাহাড়ি
-অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
কোথাও ট্যুরিস্ট, তার জাদুকাঁধে ঈষৎ ব্যাগ। টুপিতে ছিটকে যাচ্ছে রোদ। তরল সোনা। সব গাছ মা। সব ঘাস। পাথর, পাহাড়, ঢিপিগুলো বাবার মতোন। কেউ আসলে কোত্থাও পৌঁছবে না। বেজে যাচ্ছে মিশ্র পাহাড়ি রাগ। এঁকেবেঁকে, ঘুরেঘুরে, উঁচুতে নিচুতে, ঢাল থেকে ঢালে,
উঠতে থাকা নামতে থাকা গলি,
রাস্তা। দুলতে দুলতে চলা। শুনলে মনে হয় একটা বাচ্চা হাঁটা শিখছে। পাশ থেকে তবলা বাজছে। আস্তে। মৃদু। কিন্তু দৃঢ়। বাবার সঙ্গত। আর হালকা গিটার। লাইম জিন কি ভদকার মতো। আমার কেন যেন ভাবতে ইচ্ছে করে ওটা অঞ্জন দত্ত। হঠাৎ কি চঞ্চল হয়ে উঠল বাচ্চাটা? হঠাৎ হামাগুড়ি দিয়ে এদিকে ওদিকে খিলখিল দৌড়। বাবাও একটু গতি বাড়ালো তাকে ধরতে। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বাজাচ্ছেন। মিশ্র পাহাড়ি। গাঢ় এক ঘরের মতো যেন আলমারি থেকে বেরোল গোপন ফতুয়া আমার। পায়ের তলা সুড়সুড় করতে থাকে। বসে থাকতে যে ইচ্ছে করেনা। এ কোন রাগ শুনছি! এ কোন বাজনা! একসময় বাবা ছেলে দুজনেই খিলখিল হাসি আর দৌড়। নাকি পাহাড়ের আঁকাবাকা রাস্তাটাকে আমি বানিয়ে ফেলেছি বৃন্দাবন! তোমার সাথে লুকোচুরি খেলছি পাইনের বনে…
কারোর বাড়ির উঠোন বাগান টপকে তোমাকে ধরার চেষ্টা আমার… তুমি এই দেখা দিচ্ছো, তো আবার লুকিয়ে পড়ছো কার মেলে রাখা শাড়ির আড়ালে.. একবার মনে হল দেখতে পেলাম তোমার ওড়নাটা। আস্তে পা টিপে জাপটে ধরতে গিয়েই ফুস! যাব্বাবা! এ তো কুয়াশা! তুমি কোথায়! আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিলাম খাদে। দেখেছো? কিন্তু তোমাকে তো পাচ্ছিই না!
কোমরে হাত রেখে এদিকে ওদিকে দেখছি আর ঠিক এমন সময় বৃষ্টিটা নামল। আমি ক্যামন যেন ভ্যাবলা হয়ে গেলাম, জানো?
ভুলেই গেলাম আমার একটা ছাদের নিচে যাওয়া দরকার। আসলে কি করব বলো! বৃষ্টির আওয়াজটা যে মোটেই বৃষ্টির মতো ছিলো না। তোমার কাঁচের চুড়ি বাজছিল রিনরিন। হঠাৎই নামলো বৃষ্টি, আর হঠাৎ থেমে গিয়ে টুকরো মেঘটা তুলোর মতো ভেসে ভ্যানিশ হয়ে গেল কাঠের ঐ বাড়িটার পেছনে। আমি স্পষ্ট দেখলাম, মেঘটা চুপচাপ দাঁড়িয়েই ছিল। তোমার কাঁচের চুড়ির আওয়াজ ছাড়া কোত্থাও কোনো গন্ডগোল নেই। কিন্তু, কোত্থেকে কে এসে ফুঁ দিল যেন মেঘটাকে.. আর মেঘও ফুড়ুৎ। আমি দাঁড়িয়েই থাকলাম ভিজে জামায় কাপড়ে। খুব রাগ হচ্ছিল তোমার ওপরে। হরিপ্রসাদ আর অঞ্জন দত্ত’র ওপরেও হচ্ছিল। এভাবে আমাদেরকে এখানে এনে ছেড়ে যাবার কোনো মানে হয়! কি করি এখন?
আমি জানি তুমি কাছেই কোথাও আড়ালে আছো। লুকিয়ে দেখছো আমাকে। আমার জুতোর ভেতরে জল। বদগন্ধ মোজা। মেজাজটাকে কিছুতেই ওরকম হতে দেব না ভাবছি। দেখি, আরেকটু দাঁড়াই। ভাবতে ভাবতে পকেটে হাত দিয়েছি, একি!? কি এটা,
নরম তুলোর মতো!
ভেজা। তুমি? এখানে? আমার পকেটে? ও সোনা.. আর আমি তোমাকে এর উঠোনে ওর বাগানে খুঁজে বেড়াচ্ছি! পকেট থেকে আস্তে বের করে দেখি তোমার চোখে জল। কাঁদছিলে? তাহলে কি বৃষ্টি হয়নি?