Sunday 17 November 2013

Hygiene care - অর্পিতা বাগচী


Hygiene care
-অর্পিতা বাগচী

“ইস, এতো ভাল শাড়িটা ! কি গো তুমি? একটু নিজেকে সামলাও। এতো বেখেয়ালে হলে চলবে? যাক যা হবার হয়েছে। মন খারাপ ক’রো না। Hygiene care-এ দিয়ে দিও।“
বলে,সোহিনী আর তার একরত্তি মেতে টা টা ক'রে হাঁটি হাঁটি পায়ে চলে গেলো।
সত্যি, কি করে যে করলাম ! আমি? বড্ড আনমনা হয়ে যাচ্ছি আজকাল।
এবার পুজোর সব থেকে ভাল শাড়ি। খুব পছন্দ হয়েছিল। অবশ্য কাঞ্জিভরাম আমার সবসময়ের পছন্দ। Hygiene Care তো আছেই। মনে মনে এই সব ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে চায়ের জল চাপাতে গিয়ে সামনের জানালাতে দেখি, লক্ষ্মী পুজোর চাঁদটা আজ এখনও আসেনি, শীতটা ক্যামন আসছি আসছি করছে, অনেক দিনের পুরনো বন্ধু যেন, আসবো বলেও আসছে না। চারিদিক ক্যামন নিস্তব্ধ, থমথমে।
এ বাবা !  কি যে করছি না আজকাল, ওড়নাতেও! এখনি না ধুলে আর যাবে না। কিন্তু এ কি রে বাবা ! কলতলাতে ওড়না ঘসেই যাচ্ছি আর লাল নীল আরও কতো রঙ বেরিয়েই যাচ্ছে । আর আজ সকালের শাড়িটা? মনে পরা মাত্রই, ঠিক তাই। কিন্তু আমার শাড়িতেই বা ক্যানো? আমি তো সামলেই থাকি। গুছিয়েই রাখি, তা হলে কি করে হল এ্যামন?
“বৌদি, টাকা দাও। বাজারে না গেলে রান্না হবে কি? কিছুই তো নেই গো।”
প্রতিমার ডাকে হুঁশ ফেরে। সত্যি তো কিছুই নেই। সকালেই দেখেছিলাম, কি যে হয়েছে আমার, কিচ্ছু মনে থাকে না।
“দাও, দাও আমার আবার ও বাড়িতে এতো রান্না করতে হবে। বাচ্চাটার জন্মদিন।’’
ওর তাড়া শুনে তাড়াতাড়ি টাকা বার করতে গিয়ে প্রতিমার আঁচল আমার নোয়াতে
আটকালো। 
“কি গো আমার আঁচল ছাড়ো, আমার আঁচলে কি খুঁজছো?”
তবু ভাল ওর আঁচলে নেই। কিন্তু আমার আঁচলেই বা কি করে হল?
আলমারি খুলে টাকা বার করছি, আরে এ কি কাণ্ড? প্রতিমা ও প্রতিমা
 আমার চিৎকারে ও প্রায় আসতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিল, কোন রকমে নিজেকে সামলে,
“কি গো, কি হল?”
‘‘দ্যাখোনা, দ্যাখো আমি টাকা বার করতে যেই আলমারি খুলেছি আমার সব সবকটা শাড়ি এক এক করে ঘরময় উড়ে যাচ্ছে আর সব শাড়ির আঁচলে দাগ।
কি করে এমন হল প্রতিমা? কি করে! আমি তো গুছিয়েই রাখি, সামলেই থাকি। 
তুমি Hygiene care চেনো প্রতিমা? বলো না, চেনো না?’’
“তুমি এমন ক’রো না আর শাড়িগুলো তো ঠিকই আছে, আমি বরং পাশের বাড়ির বউদিকে ডেকে আনি।’’
আমার ঘরে আমাকে একা ক’রে দিয়ে প্রতিমা বেরিয়ে গ্যালো ।
সেই গান আবার, এক গান গত দুদিন ধরে বেজেই চলেছে,
লাগা চুনরিমে দাগ ছুপাঁউ ক্যায়সে? ঘর যাঁউ ক্যায়েসে..


অসুস্থ জানলা -রোহণ ভট্টাচার্য



অসুস্থ জানলা

-রোহণ ভট্টাচার্য

বাইরে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কাঁচের জানলা। সামান্য শব্দটুকুও বেরোতে পারবে না বাইরে। যদি আলো হয় তবে কাঁচ ভেদ করে বাইরের উঠোন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ত। অথচ এইসময়, ঠিক এইসময় আলোহীন শব্দই লিখতে ইচ্ছে করে ওর। ঘরের ছাদ থেকে বইয়ের তাক পর্যন্ত ধুলো। ধুলো সরিয়ে শব্দটা খুঁজে পেতে হবে। তোষকের নিচে বা বইয়ের ভাঁজে কোথাও একটা লুকিয়ে আছে শব্দটাসেই নীল হরফের শব্দ সারা গায়ে একটা সাদা কাগজ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে এই ঘরের মধ্যে। দরজা-জানলা বন্ধ তাই উড়ে পালাতে পারেনি কোথাও।

জানলার ওপাশে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ছে। বৃক্ষজীবন ত্যাগ করে একেকটা পাতা এগিয়ে চলেছে মাটিজীবনের দিকে। গাছ থেকে ছিঁড়ে মাটি অবধি যাওয়ার সময় পাতাদের জড়িয়ে ধরে আদর করে হাওয়াএলোমেলো হাওয়ার শরীরে পাতারা ভরে দেয় খসে পড়ার গান। সেই থেকে সকল খসে পড়া, সকল চলে যাওয়ারা হাওয়ার সন্তান। সদ্য জন্মানো শিশু যেমন কেঁদে কেঁদে মাকে ডাকে; ঠিক সেইভাবে বিচ্ছেদ জন্মালে তার কান্না দীর্ঘশ্বাস হয়ে হাওয়ার কাছে যায়। ঘরের ভেতর এইসময় ডাইরির পাতারা নড়ে ওঠে। একবার সেলাই খুলে ছিটকে আসতে পারলেই দুপাশের পৃষ্ঠা দুটো মেলে দেবে পাখির ডানার মতো। অথচ তারা বেশিদূর উড়তে পারে না। অক্ষরের ভারে অকেজো হয়ে গেছে ডানা। হয়ত উড়ে যাওয়া বিষয়ক কিছু একটাই লেখা ছিল সে পৃষ্ঠায়...

ঘরের ভেতর, কাঁচের এপাশে হারিয়ে যাওয়া কাগজটা খুঁজছিল যে; এতক্ষণ সে দেখছিল এইসব। দেখছিল ওপাশে কিছু দূরে আরেকটা জানলাসেই জানলায় মেঘ আসত না। কিন্তু মেঘের রাজ্য পেরোলে যে দেশ সেখান থেকে টেলিগ্রাম আসত আর আসত একটা চড়ুই পাখি যার পায়ে বেঁধে রোদ্দুর চিঠি পাঠাত ওই জানলায়। এপাশের জানলা থেকে সে বহুবার বলতে চেয়েছে


আমার চিঠি নেই। সারাবছরের অসুখ আছে। পুরোনো অসুখে জমানো ধূলো আছে ঘরময়। সেই ধূলোর গায়ে আঙুল বুলিয়ে আমি জানলা জুড়ে স্মাইলি আঁকছি তোমার জন্য।


ওর জানলা দিয়ে এয়ারপোর্ট দেখা যায় না, শুধু উড়ে যাওয়া দু-একটা প্লেন দেখা যায়। প্লেনের ছায়া এসে উল্টোদিকের জানলার কপাটে পড়লে কেমন লাগে দেখার চেষ্টা করে। বাইরে তাকিয়ে ওর মনে হয় যেন একটা গাছ চরিত্রে অভিনয় করছে সে। পাতার বদলে গাল বেয়ে জলের ফোঁটা ছিঁড়ে পড়ছে মাটিতে। আছড়ে পড়ার তীব্র আওয়াজে ভরে যাচ্ছে ঘরটা। তবু কাঁচ ভেদ করে ওপাশে যেতে পারছে না কিছুতেই। প্লেনের দিকে তাকিয়ে ওর মনে পড়ে, ওখানকার কোনো এক যাত্রীর জন্য সাদা কাগজে আলোহীন একটা শব্দ লিখেছিল সে। যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাওয়া কালিতে। এখন কোথাও তাকে খুঁজে না পেয়ে জানলার ধুলোয় হাত বুলিয়ে আরেকটা মৃদু হাসিমুখ আঁকল। তারপর আদর করার ভঙ্গিতে কাঁচটা সরিয়ে দিতেই হুহু হাওয়া এসে ধাক্কা খেতে লাগল অসুখের ওপর, ফাঁকা ওষুধের পাতাগুলো ভেসে গেল এদিক ওদিক। বাইরে গাছের গায়ে পিঁপড়েরা তখন আরেকটা নতুন নক্সা আঁকছে।

ফুল - প্রলয় মুখার্জি




ফুল
 -প্রলয় মুখার্জী

মেয়েটাকে ছেলেটা বলেছিল এটা ফুল। এরকম বিচ্ছিরি ফল জুড়ে ওরা ক্রমশ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। একটা খোলা মাঠে ওরা এখন মাঠে বসে আছে অনেক খানি ফাঁকায়। এই ফাঁকাটাই ওদের আলাদা ভরা যত্ন। মেয়েটা হাসে আর দ্যাখে ওর ভালো লাগা মেয়েটাকে হাসাচ্ছে।খুব বিচ্ছিরি হাসি, এমন কেউ ভেবে বসলেই হবে। চোখ বন্ধ করে বার বার ভাবো খুব বিচ্ছিরি হাসি। খুব মনে আসে খুব বিভৎস যন্ত্রণা গানের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। আর একবার অন্ধকার নির্জন নির্জনে তীব্র কল্পনা নামছে। চোখে মুখে কল্পনা এমন যে মানুষের মুখ না। মেয়েটার মুখে বুড়ো মোষের মুখ লাগানো, যে মোষটা প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কি তীব্র যন্ত্রণার মুখ আহা মেয়েটা হাসছে। হ্যাঁ দেখতে ভালো নয় ছেলেটার মুখ তোমরা কেউ দ্যাখোনি। মেয়েটা তখনও হাসছে খুব। এই মুহূর্তে খুব ভুলে যেতে ইচ্ছে করে মোষের মুখ। যেমন দুজন ভালবাসে মানুষের মুখ। যেমন মোষের মুখ মানুষের গর্দানে দেখতে ভাল নয়। আবার দ্যাখো একটা ছেলে দেখতে ভাল নয় একটা মেয়েকেই ভালবাসে। পাখিটাও দেখতে ভাল নয় যে নাকি সাক্ষী ছিল। এমন এক গাছের ফুল ফুটেছিল যা নাকি অসুখের পরাগরেণু। কি আশ্চর্য, দেহ ছাড়া আমরা মুখ ভালবাসি। দেখতে ভালো না মানে দেহ ছাড়া একটা মুখ। দ্যাখো এতক্ষণ এতক্ষণ দুজন চুমু খেলো। ভুলে গ্যাছো কি ভয়ঙ্কর দুজন ভালবাসে? এখন ভালবাসা শোনো, কান পেতে সবচেয়ে তীব্র ভালবাসা। আমি বিশ্বাসঘাতক শুনে তোমরা কি করবে? কি করবে শুনে ছেলেটার বা মেয়েটার ধরে কোনো মুন্ডু ছিলনা। এমন কিছু হাসি আছে যেখানে মুখ নেই। কি আশ্চর্য দ্যাখো গলাকাটা দুটো ছেলে মেয়ে তবু দুজনকে জড়িয়ে ধরছে। আর যারা মুখ দেখে বলি ফুল সুন্দর, ডানা দেখে পাখি তারা কি ভীষণ যন্ত্রণা পাচ্ছে ছেলেটা বা মেয়েটাকে সুন্দর বা বিচ্ছিরি না বলতে পেরে। শুধু ভয় পাচ্ছে । কি বিচ্ছিরি ভয়। আর মাথাকাটা দুটো ছেলে মেয়ে বলছে তোমরা তোমাদের সবচেয়ে সুন্দর মুখ গর্দানে বসিয়ে নাও।

Saturday 2 November 2013

ক্ষুধার্ত আয়না ও একটি পাখি - তন্ময় ধর

ক্ষুধার্ত আয়না ও একটি পাখি
                     -তন্ময় ধর


পাখিটা আয়নার খুব সামনে এসে শত্রু চিনতে থাকে। পারা-ওঠা আয়না। পাখির অসুবিধে হচ্ছে শত্রুর শরীরাংশ চিনতে। তাই পাখিটা ওর শৈশবের দিকে উড়ে গিয়ে ঠোক্কর মারে আমার মৃত, রাসায়নিক আঙুলে। পাখির করুণ ডাক আমার বাবা-মাও শুনেছিলেন। আমার অসাড় আঙুল ধরে ওঁরা টেনে নিয়ে চললেন।বর্ণান্ধ নীল আলো, বেগুনী আলো, লাল আলো- সব পার হয়েআমার অবশ আঙুলের ঠেলায় আয়নায় পারার প্রলেপ গাঢ় হচ্ছে।

আমার মৃত চোখ একেকটা অঙ্গের প্রেমে পড়ে। পারার কমলা রঙে ভিজে থাকা একেকটা অঙ্গ, যাদের আয়ু নেই, ছাঁচ নেই, সৌকর্য্য নেই। বিকৃতির একটু আগে যেন হেসে ফেলেছে। আমার আঙুল পেরিয়ে যায় কারো নখের বর্ণমালা। নরম নখ।পাখিটা এবার অন্যদিক থেকে উড়ে আসে।

কেউ কথা বলছে। আমাকে ডুবিয়ে-রাখা তরলের ভেতর থেকে কেউ পাখিটার স্বর নকল করছে। আমার ভ্রূমধ্যে নখের ছাপ ফেলে পাখি। পালকের গহন ঘ্রাণ থেকে প্রতিসরাঙ্ক কমাতে কমাতে পাখির মৃতদেহের সাথে আকাশযুদ্ধ শুরু করি আমি।

পাখিটার কঙ্কালতন্ত্র পরীক্ষা করতে করতে স্বচ্ছ এক ঈশ্বরের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। আকাশের অস্তিত্ব আছে কি?মেঘমন্দ্র এক স্বর থেকে আমার শরীরে আশ্চর্য্য ডানা তৈরি হয়। শাদা পালক। শাদা নৈঃশব্দ্য। আর আবহমন্ডলের তাপমাত্রা হু-হু করে কমে যাচ্ছে।

আলো-অন্ধকারের অস্তিত্ব আছে কি? পৃথিবীর আদিম এক কোষবদ্ধ জীবনের ভেতর থেকে আমার কান্না শুনতে পাই আমি। কেঁপে কেঁপে ওঠা কান্না। খোলস ফাটিয়ে বের হয়ে আসি আস্তে আস্তে। দেখি, পাখিটা নিশ্চিন্তে বসে ঠোঁট দিয়ে পালক পরিষ্কার করছে। আমি অপেক্ষা করে থাকি। আমার দিকে একবার তাকায় পাখি। তারপর আয়নার দিকে তাকায়।

আয়নাটা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে থাকে। খুব ধীর প্রক্রিয়ার ভেঙে পড়ছে একেকটা কাঁচের টুকরো। আস্তে, খু-উ-ব আস্তে। পাখিটা এই ভাঙনপ্রক্রিয়া দেখতে ব্যস্ত। আমি এ সুযোগে ওর ডিম চুরি করে পা বাড়াই বিকেলে স্ন্যাকসের দিকে। নতুন নখের ছাপ পড়ে তরলীকৃত বাতাসের গানে গানে। টিউ টিউ টিউ ...