ঘোলাজল
-নীলাদ্রি বাগচী
খণ্ডাংশের কাছে
উৎসমুখ চেয়ে চলেছে সারাজীবন। ভাঙা আয়নায় দাড়ি কাটতে কাটতে এইটেই বারবার মনে হয়।
তখন বাথরুমের জলের আওয়াজ আর রান্নাঘরের নানারকম থেকে কান উঠে যায়। মন যেন গিয়ে
দাড়ির গোরায় আসলে সময়ের স্বল্পতায়। এর পর স্নান তার পর খাওয়া আর তারও পর। এইসব
ভানায় আটকে যায় জলের আওয়াজ রান্নার নানারকম।
বালতি থেকে
মাথায় জল ঢাললেই ঘোলা বাল্বের বাথরুম সাদাকালো টেলিভিশন। চুন বালি খসা সিমেন্ট
বাঁধানো দেয়াল চোখের সামনে, গলায় বেসুরো দু এক লাইন। খানিক উহুহুহু হুস উহুহুহু।
আর ঝপ ঝপ জলের আওয়াজ। সাদাকালো জলের অবিরল ততক্ষণ যতক্ষণ না শরীর আধভেজা রেখে
পোশাক চড়ান। তারপর পৃথিবী আবার রঙিন। কিন্তু ঠিক মানুষটা যেন নেই।
মানুষটা
সামান্য ওপরে সিলিং ফ্যান আর ধোঁয়া টেবিলের মাঝামাঝি চিত উপুড় ভাসতে ভাসতে দেখছে টেবিল
সে খাচ্ছে। চেষ্টা করছে তাড়াতাড়ি, হচ্ছে না। গরমে মুখ পুড়ে
যাচ্ছে। সে ভেসে ভেসে ফিরে যাচ্ছে অতীত। দাড়ি কাটা দেখছে, স্নানের জলের ছিটে লাগছে
তার গায়ে। হাতায় মুখের জল মুছে সে ভাসতে ভাসতে আবার খাবার দৃশ্যে। তারপর বাইরে।
একবারে
ভবিষ্যতে। যখন সে আবার ফিরে এসে থিতু হল জানলার পাশের মানুষে। বাস চলছে ঢিকিয়ে
ঢিকিয়ে। ড্রাইভার কন্ডাক্টর’র অভ্যাস হয়ে
গিয়েছে এই ঢিক ঢিক। লোক গাল দিক না দিক একই গতি। মেঘলা, গুমোট দিন। এতক্ষণে
শিয়ালদা।
গয়নার দোকান
বললেই বউবাজার। সারসার কাচে অজস্র। সে আবার ভেসে যায় কাচের পাশে পাশে। এত গয়না
মানে কত মানুষ? কত কত কত মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে এই সব ঝিলিক। কত আয়নায়। কত চোখেই
না ঝলমল করে উঠছে রূপ। রূপ না রূপের মোহ? স্বর্ণতৃষা?
সেন্ট্রাল
এভিনিউ এলে আবার ফিরে আসে। দ্রুত হাঁটা ব্যস্ত রাস্তা। লেবুজল বিক্রি হচ্ছে। কাটা
ফল। হরেকরকম। একেবারে কোণে ফুটপাথ ঘেঁষে জমা বর্ষার জলে শহর দেখছে শহরকে। কখন যেন
মোড় ফুরল। আর ভাঙা চোরায় ঠোক্কর খেতে খেতে বাস ঠেকল কর্পোরেশনর সামনে। ওই তো ওরা
দাঁড়িয়ে রয়েছে সব্বাই, সাদাকালো প্রেক্ষাপটে একঝাঁক উজ্জ্বল।
মাঝরাতে
এতক্ষণে সে আবার ফিরল। মনে পড়ল তারপর চ্যাপলিনে ছিল রুদালি।
বড় ভালো লিখেছিস রে নিলু । একটা সাধারণ মানুষ কে নিয়ে তথ্যচিত্র । সকালবেলা স্নান করা থেকে যার শুরু । আর আছে অসামান্য কিছু চেনা কিন্তু আগে কখনো লেখে নি এমন ডিটেল । লোকটা হাঁটছে আর সাথে সাথে ক্যামেরা প্যান করছে । সে দেখছে আর যা যা ভাবছে তাতে ফুটে উঠছে তার অন্তর জগৎ । আর সেটাই হয়ে উঠছে লেখার প্রতিপাদ্য । কিন্তু এটা গল্প নয় । ব্যক্তিগত গদ্য । রাজর্ষি কে জিজ্ঞেস করে দেখ ,ও হয় তো "টেক্সট" বলতে পারে ।
ReplyDeleteভালো লেখা। আরও একটু বড় হত হয়তো। আপাতত সিনেমার একটা দৃশ্য হয়ে রইল।
ReplyDelete