Saturday 2 November 2013

ক্ষুধার্ত আয়না ও একটি পাখি - তন্ময় ধর

ক্ষুধার্ত আয়না ও একটি পাখি
                     -তন্ময় ধর


পাখিটা আয়নার খুব সামনে এসে শত্রু চিনতে থাকে। পারা-ওঠা আয়না। পাখির অসুবিধে হচ্ছে শত্রুর শরীরাংশ চিনতে। তাই পাখিটা ওর শৈশবের দিকে উড়ে গিয়ে ঠোক্কর মারে আমার মৃত, রাসায়নিক আঙুলে। পাখির করুণ ডাক আমার বাবা-মাও শুনেছিলেন। আমার অসাড় আঙুল ধরে ওঁরা টেনে নিয়ে চললেন।বর্ণান্ধ নীল আলো, বেগুনী আলো, লাল আলো- সব পার হয়েআমার অবশ আঙুলের ঠেলায় আয়নায় পারার প্রলেপ গাঢ় হচ্ছে।

আমার মৃত চোখ একেকটা অঙ্গের প্রেমে পড়ে। পারার কমলা রঙে ভিজে থাকা একেকটা অঙ্গ, যাদের আয়ু নেই, ছাঁচ নেই, সৌকর্য্য নেই। বিকৃতির একটু আগে যেন হেসে ফেলেছে। আমার আঙুল পেরিয়ে যায় কারো নখের বর্ণমালা। নরম নখ।পাখিটা এবার অন্যদিক থেকে উড়ে আসে।

কেউ কথা বলছে। আমাকে ডুবিয়ে-রাখা তরলের ভেতর থেকে কেউ পাখিটার স্বর নকল করছে। আমার ভ্রূমধ্যে নখের ছাপ ফেলে পাখি। পালকের গহন ঘ্রাণ থেকে প্রতিসরাঙ্ক কমাতে কমাতে পাখির মৃতদেহের সাথে আকাশযুদ্ধ শুরু করি আমি।

পাখিটার কঙ্কালতন্ত্র পরীক্ষা করতে করতে স্বচ্ছ এক ঈশ্বরের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। আকাশের অস্তিত্ব আছে কি?মেঘমন্দ্র এক স্বর থেকে আমার শরীরে আশ্চর্য্য ডানা তৈরি হয়। শাদা পালক। শাদা নৈঃশব্দ্য। আর আবহমন্ডলের তাপমাত্রা হু-হু করে কমে যাচ্ছে।

আলো-অন্ধকারের অস্তিত্ব আছে কি? পৃথিবীর আদিম এক কোষবদ্ধ জীবনের ভেতর থেকে আমার কান্না শুনতে পাই আমি। কেঁপে কেঁপে ওঠা কান্না। খোলস ফাটিয়ে বের হয়ে আসি আস্তে আস্তে। দেখি, পাখিটা নিশ্চিন্তে বসে ঠোঁট দিয়ে পালক পরিষ্কার করছে। আমি অপেক্ষা করে থাকি। আমার দিকে একবার তাকায় পাখি। তারপর আয়নার দিকে তাকায়।

আয়নাটা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে থাকে। খুব ধীর প্রক্রিয়ার ভেঙে পড়ছে একেকটা কাঁচের টুকরো। আস্তে, খু-উ-ব আস্তে। পাখিটা এই ভাঙনপ্রক্রিয়া দেখতে ব্যস্ত। আমি এ সুযোগে ওর ডিম চুরি করে পা বাড়াই বিকেলে স্ন্যাকসের দিকে। নতুন নখের ছাপ পড়ে তরলীকৃত বাতাসের গানে গানে। টিউ টিউ টিউ ...




1 comment: